শিক্ষা জীবনের পথে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা অনেক সময় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে যেসব পরিবারের সদস্যরা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এবং কঠোর পরিশ্রম করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁদের সন্তানরা প্রায়শই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। অনেকেই ভালো রেজাল্ট করা সত্ত্বেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অসমর্থ হন। এই বাস্তব চিত্র বদলাতেই কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৫ সালের জন্য বিশেষ স্কলারশিপের ঘোষণা করেছে।
এই স্কলারশিপের আওতায় দেশের হাজার হাজার শ্রমজীবী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনার খরচ বাবদ বার্ষিক সর্বোচ্চ ₹২৫,০০০ পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাবে।
এই স্কলারশিপের মূল উদ্দেশ্য কী?
মূল লক্ষ্য হলো শ্রমজীবী পরিবারের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করা ও উচ্চশিক্ষার দরজা আরও প্রশস্ত করা। অনেক সময় দারিদ্র্যের কারণে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল বা কলেজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় — সেই পরিস্থিতি যাতে না ঘটে, সেজন্য এই বিশেষ সরকারি প্রকল্প। যাতে ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ছুট না ঘটে তার জন্য প্রথম শ্রেণী থেকে এই উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সমস্ত ক্লাসেই এই স্কলারশিপ দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে।
কারা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে?
এখানে একেবারে নির্দিষ্ট যোগ্যতার শর্ত রয়েছে:
- ভারতীয় বাসিন্দা হতে হবে
- দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের হতে হবে
- বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাদের পরিবারের সন্তানেরা এই স্কলারশিপ পাবেন
✔️ পড়াশোনার স্তর — প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত।
✔️ আবেদনকারীকে অবশ্যই কোনো স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে।
আবেদনের ধাপগুলি কী কী?
১. সবার প্রথমেই অফিশিয়াল ওয়েবসাইট তথা কেন্দ্রীয় স্কলারশিপ পোর্টাল https://scholarships.gov.in-এ প্রবেশ করুন।
২. এরপর আপনার সামনে “New Registration”নামে একটি অপশন আসবে সেই অপশনে ক্লিক করে একটি নতুন একাউন্ট খুলুন।
৩. এরপর প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন ও আইডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।
4. লগ-ইন করে “Fresh Application” অপশনে গিয়ে স্কলারশিপ ফর্ম পূরণ করুন।
৫. সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন ও সাবমিট করুন।
দরকারি ডকুমেন্টের তালিকা
নথির নাম | বিবরণ |
---|---|
আধার কার্ড | আবেদনকারীর পরিচয় যাচাইয়ের জন্য |
পিতামাতার পেশার শংসাপত্র | কারখানা/সংস্থার পক্ষ থেকে ইস্যু |
আয়ের সার্টিফিকেট | স্থানীয় সরকার বা বিডিও অফিস থেকে প্রাপ্ত |
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শংসাপত্র | শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রদানকৃত |
ব্যাঙ্ক পাসবুকের কপি | শিক্ষার্থীর নিজের নামে অ্যাকাউন্ট |
সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি | কালার ছবি, ৫০ KB এর মধ্যে |
স্কলারশিপের টাকার পরিমাণ
শিক্ষার স্তর | বাৎসরিক স্কলারশিপ পরিমাণ |
---|---|
প্রথম শ্রেণী চতুর্থ শ্রেণী | ₹১,০০০ – ₹১,৫০০ |
পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী | ₹২,০০০ – ₹৩,০০০ |
নবম ও দশম শ্রেণী | ₹৪,০০০ – ₹৫,০০০ |
একাদশ – দ্বাদশ শ্রেণী | ₹৬,০০০ – ₹৭,০০০ |
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তর | ₹১০,০০০ – ₹২৫,০০০ |
গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা
কার্যক্রম | তারিখ |
---|---|
অনলাইনে আবেদন শুরুর তারিখ | ১ জুলাই ২০২৫ |
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ | ৩১ আগস্ট ২০২৫ |
বৃত্তির ফলাফল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ | নভেম্বর ২০২৫ |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা
🔸 শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবশ্যই NSP-র অধীনে রেজিস্টার্ড থাকতে হবে।
🔸 আবেদনপত্রে ভুল বা ভুয়ো তথ্য থাকলে বাতিল হবে।
🔸 নির্বাচিত ছাত্রছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে টাকা সরাসরি জমা পড়বে।
🔸 ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হতে হবে শিক্ষার্থীর নিজের নামে।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQs)
প্রশ্ন ১: এই স্কলারশিপ কি সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও পেতে পারে?
উত্তর: না। শুধুমাত্র শ্রমিক শ্রেণীভুক্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরাই এই সুবিধা পাবে।
প্রশ্ন ২: কি ধরনের খনি শ্রমিকরা এই স্কিমের আওতায় পড়ে?
উত্তর: চুনাপাথর ও ডলোমাইট খনি শ্রমিকদের সন্তানরাই এই সুবিধা পাবে।
প্রশ্ন ৩: আবেদন প্রক্রিয়া কি পুরোপুরি অনলাইন?
উত্তর: হ্যাঁ। শুধুমাত্র https://scholarships.gov.in পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করা যাবে।
উপসংহার
যারা শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান, তাদের জন্য এই স্কলারশিপ ভবিষ্যতের দিশারী হতে পারে। সময়মতো আবেদন করলে এবং সঠিক নথি দাখিল করলে এই বৃত্তি পেতে কোনও অসুবিধা নেই। ফলে দেরি না করে দ্রুত আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
অফিসিয়াল লিঙ্ক
Disclaimer: এখানে দেওয়া তথ্য সম্পূর্ণরূপে সরকারি ওয়েবসাইট এবং বিজ্ঞপ্তির উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত। বিস্তারিত জানার জন্য দয়া করে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।