গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। কলকাতা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, পশ্চিম বর্ধমান প্রভৃতি জেলায় দিনের তাপমাত্রা প্রতিদিন ৪১-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
শুধু শহর নয়, গ্রামের স্কুলগুলিতেও ছাত্রছাত্রীরা চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছিল। বিশেষ করে ছোট ক্লাসের পড়ুয়ারা দীর্ঘ সময় ক্লাসে বসতে পারছিল না। বাড়ছিল পানিশূন্যতা, মাথা ঘোরা, বমিভাব, এমনকি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও।
রাজ্য সরকারের জরুরি সিদ্ধান্ত
এই পরিস্থিতিতে অবশেষে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতর বড় সিদ্ধান্ত নিল। শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন যে ১৩ ও ১৪ জুন রাজ্যের সমস্ত সরকারি, সরকারপোষিত এবং বেসরকারি স্কুল বন্ধ থাকবে। কারণ ১৫ জুন রবিবার হওয়ায়, স্কুলগুলি আবার খুলবে ১৬ জুন সোমবার থেকে।
পাহাড়ি অঞ্চল বাদে এই নির্দেশ রাজ্যের সমস্ত জেলায় কার্যকর থাকবে।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সর্বাগ্রে
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে:
“বর্ধিত তাপমাত্রা এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনা করে রাজ্যের সব স্কুলে এই সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হলো। ছাত্রছাত্রীদের সুস্থতা ও নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।”
শিক্ষামন্ত্রীর মতে, অতিরিক্ত গরমে শিশুদের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক স্কুলে শীতল পানীয় জল, পাখা বা কুলারের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। ফলে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। তাই ছুটি দেওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না।
বেসরকারি স্কুলগুলির জন্য নির্দেশনা
শুধু সরকারি নয়, সমস্ত বেসরকারি স্কুলকেও এই নির্দেশ মানতে বলা হয়েছে। বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই ক্লাসের সময়সীমা কমিয়ে দিয়েছে বা অনলাইন ক্লাস চালু করেছে। তবে রাজ্য সরকারের নির্দেশে এবার সব স্কুলকেই নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
ছুটির সময়সূচি (WB Summer Vacation Schedule 2025)
তারিখ | দিন | অবস্থান | নির্দেশনা |
---|---|---|---|
১৩ জুন | শুক্রবার | সমগ্র রাজ্য (পাহাড় বাদে) | স্কুল বন্ধ |
১৪ জুন | শনিবার | সমগ্র রাজ্য (পাহাড় বাদে) | স্কুল বন্ধ |
১৫ জুন | রবিবার | সারাদেশ | সরকারি ছুটি (রবিবার) |
১৬ জুন | সোমবার | সমগ্র রাজ্য | স্কুল খুলবে |
গরমের দাপট কেন এত বেশি?
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগর থেকে গরম ও আর্দ্র বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। পশ্চিম দিক থেকে কোনো শীতল বায়ু আসছে না। ফলে রাজ্যের বেশিরভাগ জেলাতেই ‘হিট ডোম’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির অভাব এবং মরুকরণও প্রধান কারণ।
শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা
স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে:
✔️ স্কুল বন্ধের সময় শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাস চালু করতে পারেন।
✔️ শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক দেওয়া যেতে পারে।
✔️ প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী গৃহভিত্তিক শিক্ষায় ব্যবহারের জন্য ছাত্রদের আগেই সরবরাহ করতে হবে।
✔️ শিক্ষার্থীদের ও অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলের ওয়েবসাইট বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
জনস্বাস্থ্যের জন্য সরকারের পরামর্শ
✔️ ছেলেমেয়েদের দিনে ৩-৪ লিটার জল পান করতে বলা হয়েছে।
✔️ রোদ এড়িয়ে চলা, হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পড়া পরামর্শ।
✔️ বেলা ১১টা থেকে ৪টার মধ্যে বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ।
✔️ ফ্রুট জুস, ডাবের জল, লেবুর শরবত খাওয়ার পরামর্শ।
✔️ বাইরে গেলে ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
অভিভাবকদের অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, ছাত্রছাত্রীদের অসুস্থতা এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত সঠিক। তবে কিছু অভিভাবক দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে রাজ্যে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। তবে যতদিন না বর্ষা আসে, ততদিন এই সতর্কতা বজায় থাকবে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQs)
Q1: WB Summer Vacation কবে পর্যন্ত থাকবে?
উ: ১৩ ও ১৪ জুন স্কুল বন্ধ থাকবে। ১৬ জুন থেকে স্কুল খুলবে।
Q2: বেসরকারি স্কুলে ছুটি কি বাধ্যতামূলক?
উ: হ্যাঁ, সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে এই নির্দেশিকা প্রযোজ্য।
Q3: পাহাড়ি অঞ্চলে কি এই নিয়ম প্রযোজ্য?
উ: না, পাহাড়ি জেলার স্কুলগুলি এই নির্দেশিকার বাইরে রয়েছে।
Q4: স্কুলের সময়সূচি পরিবর্তন নিয়ে কি নতুন নির্দেশিকা আসতে পারে?
উ: পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরবর্তী নির্দেশিকা জারি হতে পারে।
Q5: ছুটির সময় অনলাইন ক্লাস চালানো যাবে কি?
উ: স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে অনলাইন ক্লাস নিতে পারবে।
উপসংহার
রাজ্যে অতিরিক্ত গরমের প্রকোপের কারণে সরকারের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী। রাজ্যের সমস্ত ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছে এই সিদ্ধান্ত স্বস্তির খবর। তবে আগামী কয়েকদিন পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে। বৃষ্টি নামলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা।