২০২৫ শিক্ষাবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্নাতক স্তরের ভর্তি প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। এর পেছনে মূল কারণ হল ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশ ও রাজ্য সরকারের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন। এই আইনি টানাপোড়েনের জেরে রাজ্যের কেন্দ্রীয় ভর্তি পোর্টাল এখনও চালু হয়নি, যার ফলে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
কি ঘটেছে এখন পর্যন্ত?
- উচ্চ মাধ্যমিক, সিবিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলেও, রাজ্যের কোনও সরকারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ভর্তি শুরু হয়নি।
- যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে দুটি বিভাগে ভর্তি স্থগিত রেখেছে এবং আইনি পরামর্শ নিচ্ছে।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ১৬৯টি কলেজেও ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায়।
- এই সমস্যাটি শুধুমাত্র কলকাতা বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ নয়—পুরো রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েই একই সমস্যা চলছে, যার মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রভারতী, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর, উত্তরবঙ্গ প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়।
মূল সমস্যা কী?
- হাইকোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যের বর্তমান ওবিসি তালিকা বৈধ নয়। সেই কারণে তালিকা বাতিল করা হয়েছে।
- রাজ্য সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনও স্থগিতাদেশ মেলেনি।
- ফলে, ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে তা আবার আইনি জটিলতায় জড়াতে পারে—এই আশঙ্কায় কলেজগুলো পোর্টাল চালু করছে না।
সরকারি অবস্থান কী?
- শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, অ্যাডভোকেট জেনারেলের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তারপরেই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
- তবে এখনও পর্যন্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আশঙ্কা
- ভর্তি পোর্টাল দেরিতে খুললে, ভালো মেধার ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যের বাইরে চলে যেতে পারে—এই ভয় স্পষ্ট করে তুলেছেন অনেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ।
- এই পরিস্থিতিকে অনেকেই “মেধা পাচার” বা Brain Drain বলে চিহ্নিত করছেন।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যরা জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর তাঁরা দিতে পারছেন না এবং এই অচলাবস্থার দায় রাজ্য সরকারের।
বিশেষজ্ঞদের মত কী বলছে?
- হাইকোর্ট যখন বলেছে ওবিসি তালিকা অবৈধ, তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ না আসা পর্যন্ত, রাজ্য চাইলেও সংরক্ষণ-সহ ভর্তি শুরু করতে পারবে না।
- এক্ষেত্রে হয় সংরক্ষণ ছাড়াই ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করতে হবে, নয়তো সুপ্রিম কোর্টের জরুরি রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ভবিষ্যতের ঝুঁকি কতটা বড়?
ঝুঁকি | প্রভাব |
---|---|
ভর্তি প্রক্রিয়া দেরি | বাইরে চলে যেতে পারে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা |
রাজ্যের উচ্চশিক্ষায় আঘাত | কলেজে ছাত্রসংখ্যা কমে যেতে পারে |
আইনি জটিলতা | ভর্তি নিয়ে মামলা-মকদ্দমা বাড়তে পারে |
এই মুহূর্তে WB কলেজে ভর্তি নিয়ে এক গভীর অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকার যদি দ্রুত কোনও পরিষ্কার নির্দেশনা না দেয়, তাহলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্র চরম সমস্যায় পড়বে। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ দ্রুত কাটানোর জন্য এবং ভর্তি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে সরকারের এখনই স্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।